Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : দ্রুত কারণ নির্ণয় করে দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামের একটি কারখানায় ভয়াবহ আগুন লেগে ৫২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৯ জন আগুনে পুড়ে এবং তিন জন আগুন থেকে বাঁচতে ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়াদের পরিচয় জানতে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া উপায় নেই। এদের বেশিরভাগই শিশু ও কিশোর। ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভাতে দেরি হওয়ায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে বিক্ষোভ ও যানবাহন ভাংচুর করে। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ ধরনের ট্র্যাজিক ঘটনা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারখানাটির নিচ তালার একটি ফ্লোরে কার্টন এবং পলিথিনের কাজ চলে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক সময় আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার খবর পেয়ে চারতালার শ্রমিকরা ছুটোছুটি করা শুরু করলে ঐ তালার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী কেচি গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়। আগুন নিভে যাবে বলে ওখানেই শ্রমিকদের বসিয়ে রাখা হয়। বের হতে না পেরে তার সবাই আগুনে পুড়ে মারা যায়। ফায়ার সার্ভিস চারতালা থেকেই ৪৯টি লাশ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা জানান, কারখানাটি অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই চলতো। এতে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। জরুরি ভিত্তিতে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কারখানায় অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হতো। এ কারণেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কারখানাটির বেশিরভাগ শ্রমিকই শিশু ও কিশোর। জানা যায়, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ভবনটিতে বিল্ডিং কোড মান হয়নি। ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ড তদন্তে পৃথক পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দেশে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় আগুন লেগে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তাজরিন গার্মেন্ট, ডিগনিটি টেক্সটাইল, পুরান ঢাকার নিমতলি ও চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনাসহ ছোট-বড় অসংখ্য কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশে মোট ১৭ হাজার ৪৮৮টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ৭৩। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে অগ্নিদুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৪ জন। এসব অগ্নিকান্ডের বেশিরভাগই ঘটেছে কারখানার অব্যবস্থাপনার কারণে। এসব কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও ফায়ার এক্সিট না থাকাসহ কেমিক্যাল ও দাহ্যপদার্থের সংরক্ষণজনিত ত্রুটি এবং বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরিই অগ্নিকান্ডের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়। হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকান্ড ঘটার ক্ষেত্রে এসব কারণ রয়েছে। এটাও বলা হচ্ছে, দেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অগ্নিকান্ড এটি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের ১৯ ঘন্টা সময় লেগেছে। আগুন নিভাতে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কারখানায় দাহ্যপদার্থ এবং রাসায়নিকের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। জ্বালানি তেল, রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, ফয়েল পেপার, প্যাকেট তৈরির কাগজসহ নানা ধরনের রাসায়নিক তরল ছিল। ফলে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ধরনের আগুন শুধু পানি ছিটিয়ে নেভানো সম্ভব নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে পানি ছিটালে আগুন আরও বেড়ে যায়। কারখানায় কি ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য বস্তু রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এজন্য ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে হয়। কেমিক্যালের ধরণ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে ফোম ও আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু রাসায়নিক পদার্থ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটাতে হয়। বাংলাদেশ কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর বলছে, কোনো ভবনে রাসায়নিক ও দাহ্যপদার্থ থাকলে তার হিসাব স্থানীয় কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কাছে জমা দিতে হয়। হাসেম ফুড কারখানা তা জমা দেয়নি এবং কারখানা পরিদর্শনের অনুমতিও দেয়নি। দেখা যাচ্ছে, কারখানাটি সবদিক থেকেই অনিয়ম ও অনিরাপদ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছিল। এর দায় কারখানা কর্তৃপক্ষের হলেও এ সংশ্লিষ্ট সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায় রয়েছে। কারখানাটি স্থাপনের সময়ই এর ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়েছে কিনা, অগ্নিনির্বাপনের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে কিনা এবং অগ্নিদুর্ঘটনা কালে কারখানা থেকে শ্রমিকদের বের হওয়ার জরুরি এক্সিট ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়নি কেন? দেখা যায়, কোনো কারখানায় আগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল উল্লেখিত নিরাপত্তা বিষয়গুলো ছিল না বলে বলা হয়। দেশে হাজার হাজার কল-কারখানা রয়েছে। এগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা দেখভালের কর্তৃপক্ষও রয়েছে। এসব কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা কতটা দায়িত্ব পালন করছে, এখন এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে, তা একেকটি কারখানায় আগুন লাগার পর প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, কল-কারখানার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য কারখানায় অগ্নিকান্ড বা অন্যকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে যেমন পড়ে, তেমনি বর্হিবিশ্বেও দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। তাজরিন গার্মেন্টে অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বর্হিবিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। পোশাক কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দেয়। গার্মেন্ট কারখানার সার্বিক নিরাপত্তা পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল ও পোশাক না কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। এতে গার্মেন্টস শিল্প বেশ সংকটের মধ্যে পড়ে। এই সংকট কাটিয়ে অনেক কারখানায় এখন উপযুক্ত নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ জরুরী আগমন-নির্গমণের পথ এবং সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে অন্যান্য শিল্প-কারখানায় এ ধরনের পরিবেশ অপ্রতুল অবস্থায় রয়েছে। এসব কারখানার দুর্ঘটনাও বর্হিবিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে সব ধরনের শিল্প-কারখানার কর্ম পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। হাসেম ফুড কারখানায় যে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ড এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে তার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অন্য কারখানা কর্তৃপক্ষও সচেতন হবে। এতে দুর্ঘটনার হার কমবে। আমরা হাসেম ফুড কারখানায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->